ডিজাইনার হয়ে উঠার গল্প
আমাদের দেশে “ডিজাইন” বা শিল্প চর্চাকে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এস এস সি পর্যন্ত একটি আবশ্যকীয় বিষয় হিসেবে পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করে বাধ্যতামূলক করা উচিত। ডিজাইন শেখাটা প্রত্যেকের জরুরী। মানুষের মননশীলতাকে উন্নত করতে আমি মনে করি “ডিজাইন শিক্ষা” অনন্য এক ভূমিকা পালন করতে পারে। ডিজাইন বলতে শুধু সফটওয়ারে বসে ডিজাইন করা বা রংতুলি নিয়ে আর্টিস্ট হয় ওঠাকে বলছি না। ডিজাইনার মানে সৃজনশীল চর্চা, পরিকল্পনা করতে শেখা, শিল্পের চোখ দিয়ে দেখতে শেখা এবং শৈল্পিক মননের বিকাশ ঘটানোর কথা বলছি।
একটু ভেবে দেখুন তো আজ পর্যন্ত কোন নিউজের হেডলাইনে কোন ডিজাইনদলাইনে দেখেছেন বা শুনেছেন ইভ টিজিং করতে কিংবা সামাজিক কোন অপকর্ম করতে?
ছোটবেলা থেকেই প্রতিটি মানুষের মাঝেই সৃজনশীলতার কিছু না কিছু দিক লুকিয়ে থাকে। আমাদের সন্তানেরা যখন ছোট থাকে তাদের বিভিন্ন উদ্ভাবনী কর্মকান্ড দেখে আমরা কতই না আনন্দিত হই, বাহবা দেই! কিন্তু তাদের সেই প্রতিভাগুলো শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারি না। পড়াশোনার চাপ, মোবাইল কম্পিউটারে গেমের মাত্রাতিরিক্ত এডিকশন এসব কিছুর নিচে চাপা পড়ে যায় সেইসব প্রতিভাগুলো। কিন্তু ডিজাইনকে যদি তাদের জীবনের সাথে আস্টেপিষ্টে বেধে দেয়া যায়, রন্ধ্রে রন্ধ্রে যদি তাদের মধ্যে সৃজনশীলতার বিষয়টিকে লালন করতে শেখানো যায় তবে সে হয়ে উঠতে পরিবারে এবং সমাজেে একজন যোগ্য নাগরিক।
আমরা উন্নত বিশ্বের গোছানো শহর, পরিষ্কার রাস্তাঘাট, মানুষের অমায়িক আচরণ সবকিছু দেখে কতই না অভিভূত হই! সে দেশগুলোর বেশীরভাগ মানুষ নিজের কাজ নিজে করে। ছোটবেলা থেকেই ছেলে মেয়েদের একে অন্যের প্রতি সন্মান প্রদর্শন করতে শেখানো হয় এবং ঘরে বাইরে তারা ডিজাইন সেন্ট্রিক একটি পরিবেশে বড় হয়। তাদের বেসিক ডিজাইনের জ্ঞান বাসা থেকেই হাতেখড়ি দিয়ে বড় করা হয়। এবং প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তারা আরও ব্যাপক আকারে ডিজাইনের চর্চা করার সুযোগ পায়। ফলে ক্যারিয়ার নিয়ে তারা শুরু থেকেই অনেক ফোকাসড থাকতে পারে। এমনি কাজের ক্ষেত্রে ডিজাইন সংক্রান্ত যে কোন বিষয় তাদের কাছে অনেক মজার এবং সহজ হয়ে যায়।
আমাদের দেশে ডিজাইনকে নিছক একটি সাবজেক্ট বলে ধরা হয় যা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাশ করে চারুকলা বিভাগে পড়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজাইনের উপর পড়াশোনার জন্য অনেক শাখা প্রশাখা আছে। এর উপর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার ও সুযোগ আছে। কিন্তু কিছু বেসিক ডিজাইনের জ্ঞান যেমন – নিজের একটি পরিকল্পনা সিম্পল একটি স্কেচ করে কারো কাছে পরিবেশন করবে, বা সুন্দর করে একটি সি ভি লিখবে, বা একাডেমীর একটি প্রেজেন্টেশন, পাওয়ার পয়েন্টে সুন্দর কিছু স্লাইড দিয়ে গুছিয়ে করবে বা হতে পারে নিজের বাড়ির ইন্টেরিওর ডিজাইনের দায়িত্বটা নিজেই নিয়ে নিল। এরকম অনেক কিছুই আমাদের চারিপাশে আছে যা ডিজাইনের সাথে সম্পৃক্ত তা জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়ার জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। ছোটবেলা থেকেই ডিজাইনার মানসিকতা নিয়ে বড় হওয়াটা এমন কন কঠিন বিষয় নয়। এর জন্য শুধু প্রয়োজন ইচ্ছে আর সুন্দর করে ভাবতে শেখার মানসিকতা।